কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে আয় করার ৫টি উপায়। কিভাবে এ.আই. এর মাধ্যমে ইনকাম করবেন।
সূচনা:
অনেকে বলে থাকে যে আপনি কোথাও ঘুরতে গিয়ে শুয়ে থাকবেন। আর এ.আই আপনার কাজ করে সেই টাকাগুলো আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে যেটা সম্পূর্ণ ভুল। শুধু যে কাজগুলো আগে করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগত সেই কাজগুলোয় আপনাকে জাস্ট কয়েকটি ক্লিকে করে দেবে। আর এইভাবেই আপনি এ.আই কে দিয়ে যে কোনও কাজ কম সময়ে করে সেখান থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন৷ কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি এ.আই দিয়ে টাকা ইনকাম করবেন কী ভাবে?
ইউটিউবে এমন প্রচুর ভিডিও রয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে এ.আই দিয়ে কিভাবে টাকা আয় করতে হয়। কিন্তু আমি আজকে আপনাদের এ.আই দিয়ে ইনকাম করার বেস্ট ৫টি উপায় সম্পর্কে বলব। আর ট্রাস্ট মি, আপনি যদি এই ৫টি উপায়ের মধ্যে যেকোনো ১টি উপায় আপনি সিরিয়াসলি ট্রাই করে থাকেন তাহলে কয়েক মাস পর আপনি নিজে এসে আমাকে থ্যাঙ্ক ইউ বলবেন৷
চলুন এখন আমরা সেই ৫টি উপায় নিয়ে কথা বলা শুরু করি৷ কিন্তু আর একটা কথা বলে রাখি যে, আমি ১,২,৩,৪,৫ এইভাবে পর পর পাঁচটা উপায় বলব, বাট এটাকে আপনারা রেংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে ধরবেন না। কারণ এমন না যে এটা এক নম্বরে আছে সেটা সব থেকে বেস্ট এবং যেটা পাঁচ নম্বরে আছে সেটা অতটা ভালো না। এখানে প্রত্যেকটা স্কিল বেস্ট আপনার যেটা পছন্দ হবে আপনি সেটা করতে পারবেন।
১. ই-বুক লেখা।
আমাদের প্রথম উপায় হল ইবুক রাইটিং এই সময়ে সে ই বুক কিন্তু প্রচুর ট্রেন্ড টপিক৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের বাইরে কিন্তু ইবুক প্রচুর জনপ্রিয় আর এই বুক বানিয়ে সেটাকে পাবলিশ করে আপনি খুব ভাল রকমের ইনকাম করতে পারবেন। কয়েকদিন আগেও ইবুক লিখতে প্রচুর কষ্ট হত। সেটা বড়দের হোক বা ছোটদের। বড়দের ফিকশন বা নন ফিকশন লিখতে হলে সেই রাইটারকে ক্রিয়েটিভিটি, ইম্যাজিনেশন সব কিছু এক করে প্রচুর টাইম এ স্টোরি বা বুক লিখতে হত বা যদি বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও বলা হয় বাচ্চাদের স্টোরিবুক বা কালার বক্স সেগুলো করতেও কিন্তু বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ফায়ার করতে হত এবং অনেক ধরনের খরচ হতো৷ মানে সেগুলো ছিল অনেক এক্সপেন্সিভ৷
এ.আই এর সাহায্যে আপনি সেই কাজগুলো কিন্তু এখন খুব সহজে করে নিতে পারবেন। আপনি চাইলে জাস্ট এক দিনের মধ্যে তৈরি করে নিতে পারবেন একটি ই বুক৷ যদি আপনি বড়দের জন্য বই লিখতে চান তাহলে আপনি জাস্ট বলবেন যে আপনি কী ধরনের বই চান এবং সেই বই যা যা লাগবে সব কিছু ChatGPT, গুগল বার্ড বা গ্রাফিটি রাইট - এই টুলগুলো আপনাকে লিখে দেবে এবং তারপর এগুলোকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ই বুক তৈরি করতে পারবেন। তারপর আপনি এই ইবুক গুলো আমাজন কিন্ডল এর মত প্লাটফর্ম এ বিক্রি করে আয় করতে পারবেন।
২. লোগো, টি-সার্ট ও স্টিকার ডিজাইন।
এ.আই এর মাধ্যমে লোগো, টি শার্ট ও স্টিকার ডিজাইন এখন জাস্ট এক পলক ফেলার মতো কাজ। যেগুলো তৈরি আসলে খুবই সহজ৷ তো এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসবে আপনি কোন এআই টুল দিয়ে কাজ করবেন? আমি সব সময় বলে থাকি সব থেকে বেস্ট হচ্ছে মিডজার্নি। বাট ওটা পেইড টুল। যদি আপনি মিডজার্নি ব্যাবহার করতে না পারেন তাহলে এটার জন্যই ইউজ করতে পারেন আইডিওগ্রাম৷ এটা খুবই ভালো এ.আই টুল। বিশেষ করে এই ধরনের স্টিকার বা লোগো ডিজাইনের জন্য এটা খুবই ভালোভাবে কাজ করে। তারপর ওই গুলোকে হালকা কাস্টমাইজ করে আপনি মাস্টার বান্ডেল, অ্যামাজন মার্চ বাই ডিমান্ড রেট বা বলটি স্প্রিং এইসব ওয়েবসাইটে সেল করেও খুব ভাল রকমের প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন৷
৩. কন্টেন্ট রাইটিং
আমাদের তার পরের উপায়টি হচ্ছে কনটেন্ট ক্রিয়েশন৷ ইটস দা মোস্ট ইন্টারেস্টিং ওয়ে টু আর্ন মানি ইউজিং এআই৷ এ.আই ব্যাবহার করে অনেকভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েট করা যায়। আর এটা যে কোনো টপিকের উপর আপনারা করতে পারবেন৷ এ.আই ইমেজ তৈরি করে তার সাথে ভয়েস দিয়ে ভিডিও তৈরি করা কিন্তু খুবই সহজ। আপনি লেক্সিকা এ.আই বা লিওনার্দো এ.আই টুল গুলতে এই ধরনের ছবি খুব সহজেই জেনারেট করতে পারেন। ভয়েস দেওয়ার জন্যে ইলেভেন ল্যাবস এর মতো এআই খুবই ভালো ভাবে আপনাকে ভয়েস বানিয়ে দেবে এবং দুই টাকে জাস্ট ক্যাপকাট এর মতো কোনও ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারে অ্যাড করে দিলে আপনার ভিডিও রেডি৷ আপনি ভিডিও গুলো ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এ আপলোড করে আয় করতে পারবেন।
৪. এ.আই ইমেজ বিক্রি।
তো আমাদের তার পরের উপায়টি হচ্ছে এ.আই ইমেজ সেল করা। এটাও অনেকটা সেই লোগো টি শার্ট বা স্টিকার ডিজাইন করার মতোই৷ বাট এখানে আপনাকে শুধু লোগো বা টি শার্ট ডিজাইন করতে হবে না। এখানে আপনাকে পুরো ইমেজ জেনারেট করতে হবে এবং এই ইমেজ তৈরি করা কিন্তু সবথেকে কঠিন কাজ যদি আপনি এটা শিখে যান একবার তাহলে এটাই কিন্তু সব থেকে সহজ কাজ৷ এ.আই ইমেজ তৈরি করার জন্য আমি সব থেকে প্রথমে যেটা রাখব সেটা হচ্ছে যে মিডজার্নি৷ মিডজার্নি ইউজ না করতে পারলে আপনি লিওনার্দো এ.আই, আইডিওগ্রাম, প্লেগ্রাউন্ড, লেক্সিকা এ.আই, যেটা খুশি আপনি সেখানে ইউজ করতে পারেন৷ তারপর এগুলো সেল করার জন্যে আপনি অ্যাডোবি স্টক, ফ্রি পিক, মাস্টার বান্ডিলের মতো ওয়েবসাইট ব্যাবহার করতে পারেন এবং এইখানে আপনি এগুলো সেল করে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন৷
৫. ফ্রিল্যান্সিং
আমাদের শেষ উপায়টা হচ্ছে ফ্রিলান্সিং। ফ্রিলান্সিং করে আসলে কত টাকা আয় করা সম্ভব, সেটা এখন আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। এটা আসলে কোন লিমিট নেই। আপনি এখান থেকে যত কাজ পাবেন আপনি তত টাকা ইনকাম করতে পারবেন। অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে এ.আই ব্যাবহার করে কী ভাবে ফ্রিলান্সিং করা যায়৷ তো চলুন ছোট্ট উদাহরণ দিই: ধরুন আপনার ১ টি ছবি লাগবে৷ সেই ছবিটা ধরুন (কথার কথা) ১ হাতির ১০টি পা আছে৷ তো আপনি গুগলে সার্চ করলেন, সব জায়গায় আপনি খুঁজলে কিন্তু সেম টু সেম ওই ধরণের ছবি আপনি কোথাও খুঁজে পেলেন না৷ বাট ওইটা আপনার খুবই ইমারজেন্সি দরকার এবং আপনার বাজেটও খুব কম। সেই কারণে আপনি চাইলেও সেই ছবিটা বানাতে পারবেন না।
তো ধরুন সেই মুহূর্তে আপনি আমার কথা জানতে পারলেন আমি এই ধরনের ইমেজ তৈরি করতে পারি। আপনি আমাকে মেসেজ দিয়ে বললেন যে আমার কাছে $৫ আছে আমার এই ধরনের ১টি ছবি লাগবে, তুমি আমাকে বানিয়ে দিতে পারবে কিনা৷ তো আমি বললাম হ্যাঁ পারব কারণ আমি এটা অলরেডি এক্সপার্ট আমি জাস্ট কয়েকটা ওয়ার্ড টাইপ করাতে ওই ধরনের ছবি চলে আসবে৷ হয়ত এটা বানাতে আমার সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা লাগতে পারে। জাস্ট আমি কথার কথা বলছি এবং সেই হিসেবে যদি আমি $৫ পায় তাহলে আমার জন্য খারাপ না এবং আপনার জন্য খারাপ না। কারণ আপনার যেটা দরকার ছিল আপনি কম টাইমে খুব ভালো ইমেজ পেয়ে যাচ্ছেন৷ আপনি অর্ডার টা আমাকে দিয়ে দিলেন৷ তারপর আমি প্রোগ্রাম গুলো টাইপ করে ওই ধরনের ছবি অনেকগুলো বানিয়ে আপনাকে দিয়ে দিলাম আপনি যেটা খুশি যোগ করলেন এখানে টাইমও কম লাগল টাকাও কম লাগল আমার লাভ হল আপনারও লাভ হল৷ এইভাবে ফ্রিলান্সিং কাজ করে৷
শেষ কথা
এই পাঁচটি উপায়ে মধ্যে সবথেকে বেশি টাকা আপনি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করতে পারবেন। বাট এটা আসলে সব থেকে কষ্টের কাজ তো এইটাই ছিল এ.আই এর মাধ্যমে ইনকাম করার বেস্ট ৫টি উপায়। তো এর মধ্যে থেকে যে কোনও এক টা আপনি ট্রাই করতে পারেন এবং কিছু কিছু এমনও আছে যেটা আপনি একসাথে ২,৩টা ট্রাই করে দেখতে পারেন।এবং আর একটা কথা অনলাইনে কাজ করা কিন্তু একদমই সহজ না৷ আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। কয়েক মাস আপনার লাগবে এগুলো করতে৷ এমন না যে আপনি আজকে শুরু করলেন এবং কালকে থেকে আপনার টাকা ইনকাম করা শুরু হয়ে যাবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের খুব ভাল লেগেছে৷ তো ধন্যবাদ সবাইকে।